৪
যীশুর পরীক্ষা।
১ যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে, যর্দন নদী থেকে ফিরে এলেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত সেই আত্মার আবেশে মরূপ্রান্তে পরিচালিত হলেন, ২ আর সেসময় দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হলেন, সেই চল্লিশ দিন তিনি কিছুই আহার করেননি; পরে সেই চল্লিশ দিন শেষ হলে তাঁর খিদে পেল। ৩ তখন দিয়াবল তাঁকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরটিকে বল, যেন এটা রুটি হয়ে যায়।” ৪ যীশু তাকে বললেন, “লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটি তে বাঁচবে না।” ৫ পরে দিয়াবল তাঁকে উপরে নিয়ে গেলেন এবং এক মুহূর্তের মধ্যে তাঁকে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাল। ৬ আর দিয়াবল তাঁকে বলল, “তোমাকে আমি এই সমস্ত রাজ্যর উপর কর্তৃত্ব ও এই সমস্ত ঐশ্বর্য্য দেব; কারণ এগুলোর উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে, আর আমার যাকে ইচ্ছা তাকে দান করতে পারি; ৭ অতএব এখন তুমি যদি আমার সামনে হাঁটু পেতে প্রণাম কর, তবে এ সমস্তই তোমার হবে।” ৮ যীশু এর উত্তরে তাকে বললেন, “লেখা আছে, তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করবে, কেবল তাঁরই আরাধনা করবে।” ৯ আর সে তাঁকে যিরুশালেমে নিয়ে গেল ও ঈশ্বরের গৃহের চূড়ার উপরে দাঁড় করাল এবং তাঁকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এখান থেকে নীচে লাফিয়ে পড়; ১০ কারণ লেখা আছে, তিনি নিজের দূতদের তোমার জন্য আদেশ দেবেন, যেন তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন; ১১ আর, তোমাকে হাতে করে তুলে নেবেন, পাছে তোমার চরণে পাথরের আঘাত লাগে।”
১২ যীশু এর উত্তরে বললেন, এটাও লেখা আছে, “তুমি তোমার ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করনা।” ১৩ আর সমস্ত পরীক্ষার পর শয়তান সুবিধাজনক সময়ের অপেক্ষার জন্য কিছুদিনের জন্য তাঁর কাছ থেকে চলে গেল।
নাসরতে যীশুর উপদেশ।
১৪ তখন যীশু আত্মার পরাক্রমে গালীলে ফিরে গেলেন এবং তাঁর কীর্তি সমস্ত অঞ্চলের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। ১৫ আর তিনি তাদের সমাজঘরে উপদেশ দিলেন এবং সবাই তাঁর খুবই মহিমা করতে লাগল। ১৬ আর তিনি যেখানে বড় হয়েছিলেন, সেই নাসরতে উপস্থিত হলেন এবং তিনি নিজের রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজঘরে প্রবেশ করলেন ও শাস্ত্র পাঠ করতে দাঁড়ালেন। ১৭ তখন যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক তাঁর হাতে দেওয়া হল, আর পুস্তকটি খুলে তিনি সেই অংশটি পেলেন, যেখানে লেখা আছে, ১৮ “প্রভুর আত্মা আমার উপর আছেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করেছেন, দরিদ্রের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য; তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, বন্দিদের কাছে মুক্তি প্রচার করার জন্য, অন্ধদের কাছে দৃষ্টি দানের প্রচার করার জন্য, নির্যাতিতদের উদ্ধার করার জন্য, ১৯ প্রভুর অনুগ্রহের বছর ঘোষণা করার জন্য।” ২০ পরে তিনি পুস্তকটিকে বন্ধ করে পরিচারকের হাতে দিলেন এবং বসলেন। তাতে সমাজঘরের সবাই একভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকল। ২১ আর তিনি তাদের বললেন, “আজই শাস্ত্রের এই বাণী তোমাদের শোনার মাধ্যমে পূর্ণ হল।” ২২ তাতে সবাই তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিল ও তাঁর মুখের সুন্দর করুণাবিষ্ট কথায় তারা আশ্চর্য্য হল, আর বলল, “এ তো যোষেফের ছেলে, তাই না কি?” ২৩ যীশু তাদের বললেন, “তোমরা আমাকে অবশ্যই এই প্রবাদবাক্য বলবে, ডাক্তার আগে নিজেকে সুস্থ কর; কফরনাহূমে তুমি যা যা করেছ আমরা শুনেছি, সে সব এখানে নিজের দেশেও কর।” ২৪ তিনি আরও বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কোনও ভাববাদী তাঁর নিজের দেশে গ্রহণযোগ্য হয় না।” ২৫ আর আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এলিয়ের সময় যখন তিন বছর ছয় মাস পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি ও সারা দেশে কঠিন দূর্ভিক্ষ হয়েছিল, তখন ইস্রায়েলের মধ্যে অনেক বিধবা ছিল; ২৬ কিন্তু এলিয়কে তাদের কারও কাছে পাঠানো হয়নি, কেবল সীদোন দেশের সারিফতে এক বিধবা মহিলার কাছে পাঠানো হয়েছিল। ২৭ আর ইলীশায় ভাববাদীর সময়ে ইস্রায়েলের মধ্যে অনেকে কুষ্ঠরোগী ছিল, কিন্তু তাদের কেউই শুচি হয়নি, কেবল সুরীয় দেশের নামান হয়েছিল। ২৮ এই কথা শুনে সমাজঘরের লোকেরা সবাই রাগে পূর্ণ হল; ২৯ আর তারা উঠে তাঁকে শহরের বাইরে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল এবং যে পর্বতে তাদের শহর তৈরি হয়েছিল, তার শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল, যেন তাঁকে নীচে ফেলে দিতে পারে।
৩০ কিন্তু তিনি তাদের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
যীশুর বিভিন্ন আশ্চর্য্য কাজ
যীশু অনেক অসুস্থ ও ভূতগ্রস্ত লোককে সুস্থ করেন।
৩১ পরে তিনি গালীলের কফরনাহূম শহরে নেমে গেলেন। আর তিনি বিশ্রামবারে লোকদের উপদেশ দিতে লাগলেন; ৩২ এবং লোকরা তাঁর শিক্ষায় চমৎকৃত হল; কারণ তিনি ক্ষমতার সঙ্গে কথা বলতেন। ৩৩ তখন ঐ সমাজঘরে এক ব্যক্তি ছিল, তাকে ভূত ও মন্দ আত্মায় ধরেছিল; ৩৪ সে চিত্কার করে চেঁচিয়ে বলল, “হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদেরকে বিনাশ করতে এসেছেন? আমি জানি, আপনি কে, ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।” ৩৫ তখন যীশু তাকে ধমকিয়ে বললেন, “চুপ কর এবং এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে যাও,” তখন সেই ভূত তাকে সবার মাঝখানে ফেলে দিয়ে তার মধ্যে দিয়ে বের হয়ে গেল, তার কোনও ক্ষতি করল না। ৩৬ তখন সবাই খুবই আশ্চর্য্য হল এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, এ কেমন কথা? ইনি ক্ষমতায় ও পরাক্রমে মন্দ আত্মাদের আদেশ করেন, আর তারা বের হয়ে যায়। ৩৭ আর আশেপাশের অঞ্চলের সব জায়গায় তাঁর কীর্তি ছড়িয়ে পড়ল।
যীশু অনেক লোককে সুস্থ করলেন।
৩৮ পরে তিনি সমাজঘর থেকে বের হয়ে শিমোনের বাড়িতে প্রবেশ করলেন; তখন শিমোনের শাশুড়ীর ভীষণ জ্বরে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাই তাঁরা তাঁর সুস্থতার জন্য যীশুকে অনুরোধ করলেন। ৩৯ তখন তিনি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে জ্বরকে ধমক দিলেন, তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল; আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে তাদের সেবাযত্ন করতে লাগলেন। ৪০ পরে সূর্য্য অস্ত যাবার সময়ে, বিভিন্ন রোগে অসুস্থ রুগীদের লোকেরা, তাঁর কাছে আনল; আর তিনি প্রত্যেক জনের উপরে হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন।
৪১ আর অনেক লোকের মধ্যে থেকে ভূত বের হল, ভূতেরা চীৎকার করে বলল, “আপনি ঈশ্বরের পুত্র”, কিন্তু তিনি তাদের ধমক দিয়ে কথা বলতে দিলেন না, কারণ ভূতেরা জানত যে তিনিই সেই খ্রীষ্ট। ৪২ পরে সকাল হলে তিনি সেই জায়গা থেকে একটি নির্জন জায়গায় চলে গেলেন; আর লোকেরা তাঁর খোঁজ করল এবং তাঁর কাছে এসে তাঁকে বারণ করল, যেন তিনি তাদের কাছ থেকে চলে না যান। ৪৩ কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “আরও অনেক শহরে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে হবে; কারণ সেইজন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।” ৪৪ পরে তিনি যিহুদিয়ার বিভিন্ন সমাজঘরে প্রচার করতে লাগলেন।