5
পুকুরপাড়ে এক পঙ্গুকে যীশু আরোগ্যদান করলেন
এরপর ইহুদীদের এক বিশেষ পর্বের সময় এলে যীশু জেরুশালেমে গেলেন৷ জেরুশালেমে মেষ ফটকের কাছে একটা পুকুর ছিল৷ ইব্রীয়তে সেই পুকুরটিকে “বৈথেসদা” বলা হত৷ এই পুকুরটির পাঁচটি চাঁদনী ঘাট ছিল; ঘাটের সেইসব চাতালে অনেক অসুস্থ লোক শুয়ে থাকত; তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্ধ, কেউ কেউ খোঁড়া এমনকি পঙ্গু রোগীও থাকত৷* কোন কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 3 যুক্ত করা হয়েছে “তারা জল কেঁপে ওঠার অপেক্ষায় থাকত৷” কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 4 যুক্ত করা হয়েছে: “বিশেষ বিশেষ সময় প্রভুর এক দূত ঐ পুকুরে নেমে এসে জল আলোড়িত করতেন৷ আর ঐ জলকম্পের পরেই প্রথমে যে জলে নামতে পারত তার যে কোন রোগ ভাল হয়ে যেত৷” সেখানে একজন লোক ছিল যে আটত্রিশ বছর ধরে রোগে ভুগছিল৷ যীশু তাকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখলেন৷ তিনি জানতেন যে সে দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছে, তাই তাকে বললেন, “তুমি কি সুস্থ হতে চাও?”
সেই অসুস্থ লোকটি বলল, “মহাশয় আমার এমন কোন লোক নেই, জল কেঁপে ওঠার সময় যে আমাকে পুকুরে নামিয়ে দেবে৷ আমি ওখানে পৌঁছানোর আগেই কেউ না কেউ আমার আগে পুকুরে নেমে পড়ে৷”
যীশু তাকে বললেন, “ওঠ! তোমার বিছানা গুটিয়ে নাও, হেঁটে বেড়াও৷” লোকটি সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেল, আর তার বিছানা তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকল৷
এ ঘটনা বিশ্রামবারে ঘটল, 10 তাই যে লোকটি আরোগ্য লাভ করেছিল তাকে ইহুদীরা বলল, “আজ বিশ্রামবার, এভাবে তোমার বিছানা বয়ে বেড়ানো বিধি-ব্যবস্থা বিরুদ্ধ কাজ হচ্ছে৷”
11 সে তখন তাদের বলল, “যিনি আমাকে সারিয়ে তুলেছেন তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও৷’ ”
12 তারা সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, “কে তোমাকে বলেছে যে তোমার বিছানা গুটিয়ে নিয়ে হেঁটে বেড়াও?”
13 কিন্তু যে লোকটি আরোগ্যলাভ করেছিল সে জানত না, তিনি কে৷ কারণ সেই জায়গায় অনেক লোক ভীড় করেছিল এবং যীশু সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন৷
14 পরে যীশু মন্দিরের মধ্যে সেই লোকটিকে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দেখ, তুমি এখন সুস্থ হয়ে গেছ; আর পাপ কোরো না, যাতে তোমার আরও খারাপ কিছু না হয়!”
15 এরপর সেই লোকটি ইহুদীদের কাছে গিয়ে বলল যে, যীশুই তাকে আরোগ্য দান করেছেন৷
16 আর এই কারণেই ইহুদীরা যীশুকে নির্যাতন করতে শুরু করল; কারণ তিনি বিশ্রামবারে এইসব কাজ করছিলেন৷ 17 তখন যীশু তাদের বললেন, “আমার পিতা সব সময় কাজ করে চলেছেন, তাই আমিও কাজ করি৷”
18 তখন ইহুদীরা যীশুকে হত্যা করার জন্য আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠল৷ তারা বলল, “তিনি যে কেবল বিশ্রামবারে বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধ কাজ করছিলেন তাই নয়, তিনি ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলে সম্বোধন করেছিলেন৷ আর এইভাবে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান জাহির করছিলেন৷”
ঈশ্বরের ক্ষমতা যীশুর আছে
19 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি পুত্র নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না৷ পিতাকে যা করতে দেখেন কেবল তাই করতে পারেন৷ পিতা যা কিছু করেন পুত্রও তাই করেন৷ 20 পিতা পুত্রকে ভালবাসেন, আর পিতা যা কিছু করেন তা পুত্রকে দেখান আর এর থেকে আরো মহান মহান কাজ পুত্রকে তিনি দেখাবেন, তখন তোমরা আশ্চর্য্য হয়ে যাবে৷ 21 পিতা মৃতদের জীবন দান করেন, তেমনি পুত্রও যাকে ইচ্ছা করেন তাকে জীবন দেন৷
22 “পিতা কারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারের ভার তিনি পুত্রকে দিয়েছেন, 23 যাতে পিতাকে যেমন সমস্ত লোক সম্মান করে তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে৷ যে পুত্রকে সম্মান করে না, সে পিতাকেও সম্মান করে না, কারণ পিতাই সেইজন যিনি পুত্রকে পাঠিয়েছেন৷
24 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ আমার কথা শোনে, আর যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর ওপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন লাভ করে এবং সে অপরাধী বলে বিবেচিত হবে না৷ সে মৃত্যু থেকে জীবনে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে৷ 25 আমি তোমাদের সত্যি বলছি সময় আসছে; বলতে কি এসে গেছে, যখন মৃতেরা ঈশ্বরের পুত্রের রব শুনবে, আর যারা শুনবে তারা বাঁচবে৷ 26 পিতার নিজের যেমন জীবন দান করার ক্ষমতা রয়েছে ঠিক তেমনই তিনি তাঁর পুত্রকেও জীবন দান করার ক্ষমতা দিয়েছেন৷ 27 এবং পিতা সেই পুত্রের হাতেই সমস্ত বিচারের অধিকার দিয়েছেন, কারণ এই পুত্রই মানবপুত্র৷
28 “এই কথা শুনে তোমরা অবাক হয়ো না, কারণ সময় আসছে, যারা কবরের মধ্যে আছে তারা সবাই মানবপুত্রের রব শুনবে৷ 29 তারপর তারা তাদের কবর থেকে বাইরে আসবে৷ যারা সৎ‌ কর্ম করেছে তারা উত্থিত হবে ও অনন্ত জীবন লাভ করবে৷ আর যারা মন্দ কাজ করেছিল তারা পুনরুত্থিত হবে এবং দোষী বলে বিবেচিত হবে৷
30 “আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না৷ আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) যেমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি৷
যীশু ইহুদীদের সাথে কথা বলতে থাকলেন
31 “আমি যদি আমার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই তবে আমার সেই সাক্ষ্য সত্য বলে গৃহীত হবে না৷ 32 অন্য একজন আছেন যিনি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেন এবং আমি জানি, যে সাক্ষ্যই তিনি দেন না কেন তা সত্য৷
33 “তোমরা সকলেই যোহনের কাছে লোক পাঠিয়েছ আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন৷ 34 কিন্তু আমি কোন মানুষের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি না৷ তবু আমি এসব কথা বলছি, যাতে তোমরা উদ্ধার পেতে পার৷ 35 যোহন ছিলেন সেই প্রদীপের মতো যা জ্বলে এবং আলো দেয়; আর তোমরা কিছু সময়ের জন্য তার সেই আলো উপভোগ করে আনন্দিত হয়েছিলে৷
36 “কিন্তু যোহনের সাক্ষ্য থেকে আরো বড় সাক্ষ্য আমার আছে; কারণ পিতা যে সব কাজ আমায় করতে দিয়েছেন, সে সব কাজ আমিই করছি, আর সেই সব কাজই প্রমাণ করছে যে পিতা আমায় পাঠিয়েছেন৷ 37 পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, এমনকি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন, তোমরা কেউই কখনও তাঁর রব শোননি, তাঁর আকারও দেখনি৷ 38 আর তাঁর শিক্ষাও তোমাদের অন্তরে নেই, কারণ ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন, তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো না৷ 39 তোমরা সকলেই খুব মনোযোগ সহকারে শাস্ত্রগুলি পড়, কারণ তোমরা মনে করো সেগুলির মধ্য দিয়েই তোমরা অনন্ত জীবন লাভ করবে আর সেই শাস্ত্রগুলিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে৷ 40 তবু তোমরা সেই জীবন লাভ করতে আমার কাছে আসতে চাও না৷
41 “মানুষের প্রশংসা আমি গ্রহণ করি না৷ 42 আমি তোমাদের সকলকেই জানি আর এও জানি যে তোমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসো না৷ 43 আমি আমার পিতার নামে এসেছি, তবু তোমরা আমায় গ্রহণ করো না; কিন্তু অন্য কেউ যদি তার নিজের নামে আসে তাকে তোমরা গ্রহণ করবে৷ 44 তোমরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারো? তোমরা তো একজন অন্য জনের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে চাও৷ আর যে প্রশংসা একমাত্র ঈশ্বরের কাছে থেকে আসে আর খোঁজ তোমরা করো না৷ 45 মনে করো না যে আমিই সেই ব্যক্তি যে পিতার কাছে তোমাদের ওপর দোষারোপ করব৷ তোমাদের সাহায্য করবেন বলে যে মোশির ওপর তোমরা আশা রাখো তিনিই তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন৷ 46 তোমরা যদি মোশিকে বিশ্বাস করতে তবে আমাকেও বিশ্বাস করতে, কারণ মোশি তা আমার বিষয়েই লিখেছেন৷ 47 তোমরা যখন মোশির লেখায় বিশ্বাস করো না, তখন আমি যা বলি তা কেমন করে বিশ্বাস করবে?”

*5:3: কোন কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 3 যুক্ত করা হয়েছে “তারা জল কেঁপে ওঠার অপেক্ষায় থাকত৷”

5:4: কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 4 যুক্ত করা হয়েছে: “বিশেষ বিশেষ সময় প্রভুর এক দূত ঐ পুকুরে নেমে এসে জল আলোড়িত করতেন৷ আর ঐ জলকম্পের পরেই প্রথমে যে জলে নামতে পারত তার যে কোন রোগ ভাল হয়ে যেত৷”